শিশুসাহিত্য

আনন্দালোকে যাত্রা

শাকিলা নাছরিন পাপিয়া

[ আবুল কালাম আজাদ বিপ্লব আমার ছোট ভাই। কর্মরত ছিল প্রথম আলো পত্রিকায়। ২০২১ সাল। চারদিকে করোনা আর ডেঙ্গুর তাণ্ডব। সামান্য জ্বর আর বমি নিয়ে দুই হাসপাতাল ঘুরে তিন নম্বর হাসপাতালে ভর্তি করতে পারলাম রাত ১১টায়। টেস্টে ধরা পড়ল ডেঙ্গু। সারা রাত বমি বন্ধ হলো না। সকালে অস্থিরতা শুরু হলো। হাসপাতালের নার্স, ডিউটি ডাক্তার নির্বিকার। উপায় না পেয়ে আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও নিয়ে গেলাম বিআরবি হাসপাতালে। ডাক্তার জানালেন দেরি হয়ে গেছে। লাইফ সাপোর্টে দেওয়ার আগেই চলে গেল না ফেরার দেশে। ২০২১-এর ১৩ জুলাই ছিল সেদিন। এত সহজে চলে যায় কেউ, জানা ছিল না। বিপ্লবকে স্মরণ করে এ লেখা ]

 

এক

শীত করছে?
আমার বুকের মাঝে আয়।
কাঁদছিস কেন?
ভেবেছিলাম হারিয়ে গেছি।
ধুর বোকা হারাবি কেন? আমি আছি না?
আমার ক্ষিধে পেয়েছে, আম্মুর জ্বর। আমায় খাইয়ে দেবে কে?
আমি দেব।
বাইরে ঝড়-বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আমার ভয় করছে আপা।
ভয় কী? এই তো আমি।

বড় বোন তিন-চার বছর বয়সে এভাবেই মায়ের পাশাপাশি বিকল্প মা হয়ে ছোট ভাই-বোনকে আগলায়।

 

দুই

—কষ্ট হচ্ছে?
—আমার পেটব্যথা করছে।
—সিস্টার আমার ভাইয়ের পেটব্যথা।
—ওষুধ দিয়েছি।
—বমি কমছে না।
—ওষুধ দিয়েছি।
—আমার ভাইয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তারকে বলুন।
—সন্ধ্যার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।
—এখন সকাল ৮টা। রোগীর অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকব?
এটা হাসপাতাল। একজন না থাকলে অন্যজন থাকবে। ডাক্তার কেন থাকবে না?
—এত অস্থির হলে চলবে না। ডেঙ্গু হলে এ রকমই হবে।
নির্বিকার নার্স, ডিউটি ডাক্তার।
কষ্টে কুঁকড়ে যাওয়া ভাইয়ের মাথাটা বুকের মাঝে নিয়ে শুধাই, অন্য হাসপাতালে যাবি?
টাকার কথা ভাববি না। তোর এখানে থাকতে মনে না চাইলে সবচেয়ে দামি হাসপাতালে নিয়ে যাব,
যা আছে সব বিক্রি করে দেব। তবু তুই ভালো হয়ে বাসায় চল।

 

তিন

চতুর্থ হাসপাতালে যাত্রাপথে ঊর্ধ্বপানে তাকাই।
হে দয়াময়, আমাদের বলার কোনো জায়গা নেই। কেন এক এক করে চারটি হাসপাতাল ঘুরতে হবে?
কেন হাসপাতাল আছে ডাক্তার নেই, কেন ডাক্তার আছে চিকিৎসা নেই?
দয়া করো আমায়। একটামাত্র ভাই আমার। আমার বুক থেকে তাকে কেড়ে নিও না।
আমার সময়টা ধার দিয়ে হলেও তাকে জীবন দাও দয়াময়।

 

লেখক

 

চার

ভাই, ভাই, ভা…ই…
কোথায় তুই?
আকাশের চেয়েও বিশাল শূন্যতায় চোখ রাখি
হাত বাড়াই।
আমার বুকের মাঝে বেড়ে ওঠা ছোট্ট পাখিটা
ক্রমেই দূর থেকে দূরে সরে।
অসীম শূন্যতায় মেঘ সরিয়ে, আকাশ সরিয়ে
খুঁজতে থাকি শৈশবের মতো।
আমি খুঁজছি, খুঁজছি, খুঁজছি
নক্ষত্রের ভিড়ে, মেঘের দেশে, আকাশের ওপারে।

 

পাঁচ

দুর্গার হাত ছেড়ে আঁচলের ফাঁক দিয়ে ফুড়ুত করে পালায় অপু।
আনন্দালোকের এ যাত্রায় সে একাকী।
দুর্গার হাহাকার, ফিরে আসার আকুতি কোনো পিছু ডাক পৌঁছে না কানে।
অনন্তলোকের এই যাত্রায় সে একাকী। আপুকে ছাড়াই চলছে।
আনন্দালোকে ভয় আর দুঃখের কোনো স্থান নেই।

 

লেখক পরিচিতি

শাকিলা নাছরিন পাপিয়া। জন্ম ১০ মার্চ ১৯৬৮, ঢাকা। কবি, গল্পকার ও কলামিস্ট। পেশা শিক্ষকতা। প্রকাশিত বই দুটি। যোগাযোগ : shakilanasrin100@gmail.com

Leave a Comment

১ comment

Anonymous শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪ - ২:১২ অপরাহ্ণ

তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

Reply

বিজ্ঞাপন

সম্পাদক : মীর হেলাল । শিল্প নির্দেশক : বদরুল হায়দার । © 2023 পৌষ
editor@poushh.com । তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা । 01914 441 825